যে সমস্ত মায়েরা নবরাত্রিক পূজা করছেন তাদের জন্য এই লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আপনারা এখানে পেয়ে যাবেন যথাক্রমে,
মাতা শ্রীশ্রী ১. শৈলপুত্রী, ২. ব্রহ্মচারিণী, ৩. চন্দ্রঘণ্টা, ৪. কুষ্মান্ডা, ৫. স্কন্দমাতা, ৬. কাত্যায়নী, ৭. কালরাত্রি, ৮ মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রীর পূজার সঠিক নিয়মসহ রাত্রিক্ষণ।
দেবীপুরাণ অনুযায়ী সৃষ্টির প্রারম্ভে ত্রিনয়না এক নারীর জন্ম হয়। যাঁকে আমরা শ্রীশ্রী মা অদ্যাশক্তি নামে জানি। অন্ধকারচ্ছন্ন পৃথিবীতে মা সত্যিই খুব একাকী বোধ করেন এবং সৃষ্টির ইচ্ছে জাগে মায়ের মনে কিন্তু পুরুষ ভিন্ন সৃষ্টি অসম্ভব তাই মা নিজের বিশেষ অঙ্গের ময়লা নিয়ে সৃষ্টি করেন ত্রিমুন্ড যুক্ত একজন পুরুষের। যিনি আমাদের কাছে ব্রহ্মা বা শ্রীশ্রী ব্রহ্মদেব নামে পরিচিত। ব্রহ্মার জন্মের পর মা আদ্যাশক্তি তার কাছে নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করে সৃষ্টি রচনার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ব্রহ্মা তার নিজের জন্ম বৃত্তান্ত শুনবার পর মায়ের ইচ্ছে পূরণে অমত প্রকাশ করে বলেন “তুমি আমার জননী তাই তোমার এই ইচ্ছে পূরণ আমার পক্ষে অসম্ভব” ব্রহ্মার মন্তব্যে ক্রোধাগ্নিতে জ্বলে উঠে মা আদ্যাশক্তি তার ত্রিনয়নের দ্বারা ভস্মীভূত করে দেন ব্রহ্মাকে। এর কিছুকাল পর একই প্রক্রিয়ায় শ্রীশ্রী বিষ্ণু বা নারায়ণের সৃষ্টি করেন মা আদ্যাশক্তি। শ্রীশ্রী বিষ্ণুর কাছেও মা আদ্যশক্তি তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত সহ নিজের অর্থাৎ সৃষ্টির ইচ্ছে প্রকাশ করলে, বিষ্ণও একই উত্তর দেন এবং মা আদ্যশক্তি তাঁর ত্রিনয়নের দ্বারা তাঁকেও ভষ্ম করে দেন। এবার মা গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে স্তব্ধ হন, কিন্তু বারবারই সৃষ্টির ইচ্ছে জাগে মায়ের মনে। আর ভাবতে থাকেন কি করে, কে হবে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠা, কিভাবে সম্ভব এই পৃথিবীর সৃষ্টি!!! কিছুকাল পর মা আদ্যাশক্তি স্থির করেন তৃতীয় বা শেষ বারের মত একজন পুরুষের সৃষ্টি করবেন এবং তার দ্বারাই রচিত হবে পৃথিবীর আর যদি অসফল হন অর্থাৎ সেও যদি সৃষ্টির রচনায় অমত প্রকাশ করেন তাহলে মা আবার বিলীন হয়ে যাবেন সেই মহাঅন্ধকারে। সর্বশেষে ধীরস্থির ও শান্ত্ব মনে একই প্রক্রিয়ায় জন্মদেন তৃতীয় পুরুষ বা দেবাদিদেব শ্রীশ্রী মহেশ্বরের। জন্মের পর দেবাদিদে মহেশ্বর বা শিব দেখতে পান ঘোর চিন্তায় নিমগ্ন মা আদ্যশক্তি। কৌতুহলী শিব মায়ের কাছে জানতে চান তার এই চিন্তার কারন কি ? জানতে চান তাঁর নিজের জন্ম বৃত্তান্ত। স্থিতধী কাটিয়ে ধীর-স্থির কন্ঠে মা আদ্যশক্তি কেবল মহেশ্বরেরই নয় তাঁর দুই অগ্রজ অর্থাৎ ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর জন্ম বৃত্তান্ত সহ মায়ের ইচ্ছে পূরণে অনিচ্ছা প্রকাশ করায় তার পরিনীতির কথাও উপস্থাপন করেন সেই সঙ্গে মা একথাও বলেন তাঁর ইচ্ছে পূরণ না হলে, সৃষ্টির রচনা নাহলে, মা আদ্যশক্তি তাঁর ত্রিনয়নের দ্বারা মহেশ্বর বা শিবকেও ভস্মীভূত করে পুনরায় সে ওই মহাঅন্ধকারে বিলিন হয়ে যাবেন। কিন্তু মহেশ্বর অত্যন্ত বুদ্ধিমান তাই তিনি বলেন “আমি তোমার ইচ্ছে পূরণে রাজি আছি কিন্তু আমার কয়েকটি শর্ত আছে। সেগুলি পূর্ণ করতে হবে” মা বলেন কি সেই শর্ত ? উত্তরে মহেশ্বর বলেন আমর তিনটি শর্ত আছে।
(১).সর্বপ্রথম আমাকে ওই ত্রিনয়ন প্রদান করতে হবে যে ত্রিনয়ন দ্বারা তুমি আমার দুই অগ্রজকে ভষ্মিভূত করেছ এবং তার ব্যবহার বা প্রয়োগ সম্বন্ধে অবগত করতে হবে।
(২). যেহেতু এই রূপে তুমি আমার সৃষ্টি করেছ তাই এই রূপের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে সৃষ্টির রচনা আমার পক্ষেও অসম্ভব। কারণ এই রূপ আমার জননীর তাই তোমার এই রূপের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে সৃষ্টি রচনা আমার পক্ষেও অসম্ভব, কিন্তু এই রূপ পরিবর্তন করে অন্যরূপে আসলে তোমার ইচ্ছে পূরণে কোনো বাধা থাকবে না সেই সঙ্গে সৃষ্টিও সম্ভব হবে।
(৩), আমার দুই অগ্রজ অর্থাৎ ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর শরীরে পুনরায় প্রাণ দান করতে হবে। তাহলেই আমি তোমার সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ করব।
মা আদ্যশক্তি মহেশ্বর বা শিবের শর্তে রাজি হয়ে ব্রহ্মা এবং বিষ্ণুর দেহে প্রাণ দান করেন। জেগে ওঠেন ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু। ত্রিনয়ন সহ আদ্যশক্তির প্রায় সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগের শক্তি লাভ করেন মহেশ্বর। শ্রীশ্রী ব্রহ্মা নিমগ্ন হন সৃষ্টির রচনায়। মানব কল্যাণ সহ রক্ষার দায়িত্ব নেন শ্রীশ্রী বিষ্ণু এবং শক্তি, সৃষ্টি, সাধনা সহ সমস্ত দায়িত্ব নেন শ্রীশ্রী মহেশ্বর বা দেবাদিদেব মহাদেব অর্থাৎ শিব।
এরপর শুভক্ষণে যাদের জন্ম হয় তাঁরা দেব-দেবীরূপে স্বর্গরাজ্যে বসবাস করতে থাকেন এবং অশুভক্ষণে যাদের জন্ম হয় তারা দানব বা অসুর রূপে স্থান পায় মর্তে বা মৃত্যুলোকে। আজও শুভক্ষণে যাদের জন্ম হয়, তারা অহিংস, ধার্মিক,সৎ, নিষ্ঠাবান এবং সর্বদাই শুভ কর্মে ব্যস্ত থেকে নিজের বংশ তথা সমাজের নাম উজ্জ্বল করে থাকেন। কিন্তু যাদের জন্ম হয় অশুভক্ষণে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষের মনের মধ্যেই থাকে হিংসা, অধর্ম, তঞ্চকতা, অসততা সহ বিভিন্ন ধরনের অসামাজিকতা। সেই সঙ্গে এরা অসামাজিক কাজকর্মের মধ্যে ব্যস্ত থেকে নিজের বংশ তথা সমাজের নাম কুলষিত করে থাকে। এরা কখনোই নারীকে সম্মান করে না নারী এদের কাছে একটি ভোগ্য বস্তু। এরা বারবারই ভুলে যায় যে নারীকে আজ অবজ্ঞা করছে, অসম্মান করছে, ভোগ্যবস্তু মনে করছে একদিন সেই নারীর গর্ভেই তার জন্ম হয়েছিল। নারী কখনো মা, কখনো ভগ্নি, কখনো কন্যা, কখনো বান্ধবী, আবার কখনো স্ত্রী। যে ব্যক্তি নারীকে যথাযথ সম্মান করেন তিনি কখনোই পর্থীব সুখ থেকে বঞ্চিত হন না এবং সহসা কোনো ধরনের বিপদ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। কোন না কোনভাবে নারী শক্তি তাকে রক্ষা করে থাকে। পুরানে এর বহু দৃষ্টান্ত উল্লেখিত আছে। কু-উদ্যেশ্যে স্বর্গবাস তথা স্বর্গসুখ লাভের উদ্দেশ্যে যখনই কোন অসুর বা দানব সর্বরাজ্য আক্রমণ করেছে সঙ্গে সঙ্গে শ্রীশ্রী মা আদ্যাশক্তি আবির্ভূত হয়ে সেই শত্রুর বিনাশ করে দেবগনের সম্মান রক্ষা করেছেন। আজও কোন ব্যক্তি বিপদে পড়ে যদি একাগ্র চিত্তে মাকে স্মরণ করেন তাহলে মা তাকে অবশ্যই রক্ষা করে থাকেন। পার্থীব সুখ উজাড় করে দেন মা তাঁর ভক্তকে। কিন্তু মাকে ডাকতে জানেন ক’জন ? আমরা সারম্বরে মায়ের পূজা করে থাকি ঠিকই, কিন্তু সফল হই কজন ?
আসুন আগামী শারদীয়া দেবীপক্ষে নবরাত্রিক পূজায় মা’কে জাগিয়ে তুলবার সঠিক পদ্ধতিটি জেনে নেই। আমি নিশ্চিত সঠিক নিয়ম নিষ্ঠা এবং সময়কালে এই পুজো সম্পন্ন করতে পারলে যে কোন ব্যাক্তির মোক্ষপ্রাপ্তি হবেই এতে কোন সন্দেহ নেই। মনেরাখা বাঞ্ছনীয় আপনার ভোজনে যেমন অন্যের ক্ষুধা নিবৃত্তি হয় না ঠিক তেমনি অন্যের দ্বারা পুজো করালে আপনি কোন ধরনের ফল পাবেন কিনা এর কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই নিজের পুজো নিজেই করবেন। মনে রাখবেন পুজার জন্য প্রয়োজন শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস, নিষ্ঠা, পবিত্রতা এবং একাগ্রতা এই ছটি তথ্য। সেই সঙ্গে আমি যে নিয়ম, দিনক্ষন এবং মন্ত্র উল্লেখ করছি, আপনি যদি সেগুলি মেনে চলতে পারেন তাহলে নিশ্চিত সাফল্য পাবেন এতেও কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ প্রয়োজনে প্রথম দিন এবং শেষ দিনে কোন সৎ ব্রাহ্মণ বা ব্রাহ্মণ পত্নীর সাহায্য নিতে পারেন। তবে পূজা অনুষ্ঠান নিজেই সম্পন্ন করবেন।
শ্রীশ্রী মা আদ্যাশক্তি শিবের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি ন’বার নয় রূপে জন্ম নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব বা মহেশ্বর অর্থাৎ শিবের সাথে মিলিত হবেন। সেই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী পরবর্তীকালে শ্রীশ্রী মা আদ্যশক্তি ন’রূপে নয়বার জন্ম নেন এবং প্রতিবারই শিবকে বিবাহ করবেন। আজ এবছরের অর্থাৎ ২০২৫এর শরৎকালে দেবী দুর্গার সেই নয় রূপের পূজায় মা’কে তুষ্ট করাবার দিনক্ষণ, মন্ত্র এবং পূজা পদ্ধতিসহ মায়ের কোন রূপের পূজায় কি ধরনের ফল প্রাপ্তি ঘটতে পারে সেই নিয়ে আলোচনা করবো অর্থাৎ কিভাবে পাবেন “নবদুর্গার আরাধনায় নিশ্চিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য” ভারতের হিন্দি বলয়ে এই পূজা প্রায় সমস্ত প্রদেশ তথা জেলাতেই প্রচলিত আছে। সেখানে বছরে দু’বার অর্থাৎ শরৎ এবং বসন্তকালে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে থাকে। অবশ্য বর্তমানে পশ্চিম তথা পূর্ববঙ্গেও এই পূজা উদযাপিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে গৃহের বধূগণ এই পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে থাকেন। অবশ্যই কথাও সত্যি ভারতবাসী যারা বিদেশে থাকেন তারাও কিন্তু এই পূজা অনুষ্ঠান নিজ গৃহে সাড়ম্বরে উদযাপিত করে থাকেন। কারণ বিদেশ থেকেও অনেকেই অনুরোধ জানিয়েছেন এই পূজার নিয়ম নিষ্ঠা এবং দিনক্ষণ উল্লেখ করতে। তবে মনে রাখতে হবে ল্যাটিচিউড ল্যাটিচিউট এর উপর নির্ভর করে সময় অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন জায়গার টাইম জোন ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই যারা দেখছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি আপনার পূজার স্থানের সময়ের সাথে কলকাতার সময় মিলাবেন না। তাই আপনাদের পূজার নির্দিষ্ট সময়ের বিবরণ জানতে একটি ফোন করে আপনি কোথায় পূজা করবেন সেই স্থানের পূজার সময়টি জেনে নিতে পারেন।
যারা আমার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছে, তারা সকলেই পূজা পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত। কারণ আমি আমার শিষ্যদের সর্ব প্রথম পূজা পদ্ধতি শিখিয়ে থাকি। যারা আমার শিষ্য নন এবং পূজা পদ্ধতি সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই তাদের উদ্দেশ্যে বলছি।
সর্বপ্রথম জেনে নিন পূজার নিয়ম সহ উপকরণ :-
(ক) সর্বপ্রথম আচমন অর্থাৎ মুখ শুদ্ধি, জল শুদ্ধি, ফুল শুদ্ধি,দেহ শুদ্ধি, আসন শুদ্ধি, দেহ বন্ধন, দিক বন্ধন ইত্যাদির পর।
(খ) পঞ্চ পল্লব অর্থাৎ বট, অসত্থ,আম, কাঁঠাল এবং বকুলের পল্লব। অনেকের ধারণা পাঁচটি পাতাযুক্ত আমের পল্লবই পঞ্চপল্লব, না। এই ধারণাটি ভুল। মনেরাখা বাঞ্ছনীয় প্রতিটি পল্লবেই যেন ন’টি করে অখন্ড পাতা থাকে এবং পূজার সময় সর্ষের তেল দিয়ে গোলা লাল সিঁদুরের টিপ অনামিকা দ্বারা মনে মনে “হ্রীং” উচ্চারণ করে প্রতিটি পাতার মাঝখানে লাগিয়ে দিতে হবে সেই দিকে যেদিকে সূর্যের আলো পড়ে।
(গ) নবদুর্গার নামে নয় দিনে নয়টি ঘট বসাতে পারলে খুব ভালো হয় কিন্তু সকলের পক্ষে তা’ সম্ভব নাও হতে পারে তাই প্রথম দিন ছবিতে দেওয়া আসনের মাঝখানে মাঝখানে র্অথাৎ “হ্রীং” এবং “সিদ্ধদাত্রী” লেখা জায়গার উপর অর্থাৎ বৃত্তের মধ্যে স্থলে ঘট প্রতিষ্ঠিত করে পূজা আরম্ভ করতে হবে। তাই একটি ঘট সম্বন্ধেই উল্লেখ করছি।
(ঘ) ঘটের মাঝখানে র্অথাৎ ঘটের পেটের উপর অনামিকার দ্বারা সিঁদুর দিয়ে ছবিতে দেওয়া ত্রিভুজ এঁকে তার মাঝখানে “হ্রীং” লিখতে হবে যেভাবে ছবিতে দেওয়া আছে।
(ঙ) একটি সাদা কাগজের উপর বা পরিস্কার জায়গায় রঙ্গলীর মত আসন এঁকে তার মধ্যে অষ্টদল পদ্ম অর্থাৎ আট’টি পাপড়ি যুক্ত পদ্মফুলের মত এঁকে তার প্রতিটি পাপড়িতে নবদুর্গার নাম লিখতে হবে এবং মাঝ খানে হ্রীং এর ঠিক নিচে সিদ্ধিদাত্রীর নাম লিখতে হবে। ঠিক যেভাবে ছবিতে লেখা আছে।
(চ) আসনের মধ্যস্থলে অর্থাৎ হ্রীং এবং সিদ্ধিদাত্রী লেখা জায়গার উপর গঙ্গা বা পবিত্র মাটি, কুচো ফুল (গাঁদা ফুল বা দোপাটি ফুল হলেও চলবে ), নয়পাতা যুক্ত নয়টি দূর্বা, পঞ্চ শস্য রেখে গঙ্গার বা পবিত্র জল যে জল প্রথম দিন কলসিতে করে তোলা জলপূর্ন হ্রীং অঙ্কিত ঘটটিকে নব দুর্গার নাম মনে মনে উচ্চারণ করে এবং তাদেরকে আহ্বান জানিয়ে ঘটটি স্থাপন করতে হবে। জল তুলবার দিনক্ষণ একটু পরে বলছি। খুব ভালো হয় যদি কোন সৎ ব্রাহ্মণের সাহায্য নেন কিম্বা কোন ব্রাহ্মন পত্নীর সাহায্য নেন, কিন্তু মনে রাখবেন নিজে হাতেই ঘট বসাবেন এবং মনে মনে মাকে আহ্বান জানিয়ে মনে মনে বলবেন “হে মা নবদুর্গা আমি তোমার পূজার নিয়ম-নিষ্ঠা কিছুই জানিনা। আমি আমার শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস, নিষ্ঠা, পবিত্রতা এবং একাগ্রতা সহ তোমার পুজা সম্পন্ন করবার চেষ্টা করছি। তুমি এই ঘটে অবস্থান করো এবং আমার পুজো গ্রহণ করে আমার সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ কোরো।
(ছ) প্রতিদিন ঘটটিকে নতুন নতুন জবার মালা পরাবেন সম্ভব হলে পদ্মের মেলাও পড়াতে পারেন। তবে নবম বা শেষ রাত্রে আটটি পদ্ম অভাব আটটি রক্ত জবা মায়ের নামাঙ্কিত আটটি পাঁপড়ির উপর মায়ের মন্ত্র উচ্চারণ করে স্থাপন করবেন এবং মধ্যে স্থলে অর্থাৎ যেখানে হ্রীং এবং সিদ্ধিদাত্রী লেখা আছে সেই স্থানে একটি পদ্ম বা রক্ত জবা ফুল দিয়ে শেষ রাত্রের পূজা আরম্ভ করবেন।
(ঝ) সাধ্যমত ফল, মিস্টি,ভোগ এবং জল ইত্যাদি অর্পণ করে শ্রীশ্রী মা আদ্যশক্তির নবরূপের পূজা শুরু করতে হবে। আবার বলছি প্রথম এবং শেষ দিন কোন সৎ ব্রাহ্মণ বা ব্রাহ্মণ পত্নীর সাহায্য নিতে পারে। প্রয়োজনে আমার কাছে আসবেন আমি আপনাকে পূজা পদ্ধতি বুঝিয়ে দেব।
(ঞ) মনে রাখবেন সংকল্পহীন কোন পুজো কখনোই সফল হয় না। তাই প্রতিদিন পুজোর আগে অবশ্যই সংকল্প করবেন। সংকল্প কোন কঠিন ব্যাপার নয়, কুষিতে অর্থাৎ কোষা-কুষির মধ্যে যেটি ছোটো তার মধ্যে প্রথম দিনের কলসিতে করে তোলা জল, হরীতকী, পঞ্চশস্য, অগরু, চন্দন, কুচো গাঁদা ফুল বা দোপাটি ফুল এবং একটি লাল জবা ফুল রেখে অনামিকার দ্বারা হরিতকি স্পর্শ করে মায়ের যে রূপের পূজা করবেন মনে মনে তাকে স্মরণ করে এবং তার নাম উচ্চারণ করে আপনার মনস্কামনাসহ পরিবারের সকলের আয়, উন্নতি, সুস্থতা ইত্যাদি কামনা করবেন। অনেকেই বলেন মায়ের কাছে কখনোই কিছু চাইতে নেই। কিন্তু যারা এই কথা বলেন তাদেরকে বলবেন সংকল্পের বাংলা মানেটা আমাকে একটু বুঝিয়ে দিন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন সংকল্প কেন করানো হয় এবং এর অর্থ কি ?
জল তোলার দিনক্ষণ :- মনেরাখা বাঞ্ছনীয় আগামী ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৫ই আশ্বিন সোমবার ১৪৩২ ভোর ৪টে থেকে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের মধ্যেই গঙ্গা বা পবিত্র জলাশয় থেকে একঘরা বা এককলসি জল তুলে রাখতে হবে, যে জল দিয়ে মায়ের ৯ দিনের পূজো হবে। তাই দয়াকরে একটু বড় ঘরা বা কলসি নেবেন, প্রয়োজনে দু-তিন ঘরা বা দু-তিন কলসি জল তুলে রাখতে পারেন। জল বেচে গেলে কোন ক্ষতি হবে না কিন্তু কম পড়ে গেলে দ্বিতীয় বার জল তোলা উচিত নয়। এও মনেরাখা বাঞ্ছনীয় এই নয়দিন সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার সহ ব্রহ্মচর্য পালন করতেই হবে। যেখানে ঘট বসানো হবে পূজারী যদি সেইখানেই রাত্রি যাপন অর্থাৎ সেইখানেই ঘুমায় তাহলে খুব ভালো হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রাত্রে মা পূজারীকে দর্শনসহ স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন। মনে রাখবেন স্বপ্ন না দেখে মায়ের নামে মিথ্যা বললে আপনার কিন্তু মহাপাপ পাপ হবে এবং আপনি হয়তো হাতেনাতে তার ফলও পেয়ে যেতে পারেন, তাই দয়া করে মায়ের সম্বন্ধে কোনরকম মিথ্যাচার করবেন না। পৃথিবীর প্রতিটি পুরুষের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ এই নয়দিন পৃথিবীর প্রতিটি নারীকে মাতৃরূপে সম্মান করবেন। এতে আপনি নানাধরনের সুফল পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিঃ দ্রঃ – মনে রাখবেন পুজোর সময় কোন রকম কথাবার্তা বলবেন না বিশেষ প্রয়োজনে কাগজ-কলম নিয়ে বসবেন তাতে লিখে দেবেন। কারণ কথা বললে মুখ থেকে থুতু বেরোবে এবং সেই থুতু গিয়ে পড়বে ফুল এবং ফলের উপর। অর্থাৎ সেই মুহূর্তে আপনার পুজো শেষ হয়ে যাবে, মা গ্রহণ করবেন না। তাছাড়া সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করলে জিভ এবং দাঁতের সংঘর্ষে অত্যন্ত থুতু নির্গত হয়। তাই দয়াকরে পুজোর সময় কোন কথাবার্তা বলবেন না। এ যাবত আপনি যত পুজো দেখেছেন কোন পুজোই ঈশ্বর গ্রহণ করেননি এবং সম্পূর্ণ হয়নি। কারণ, মুখ থেকে থুথু বের হবার জন্য শুরুতেই পূজোর সমাপ্তি ঘটেছে।
১.শৈলপুত্রী

১.শৈলপুত্রী :- নবদুর্গার প্রথম রূপ শৈলপুত্রী। যিনি পূর্ব জন্মে ছিলেন প্রজাপতি দক্ষ রাজের কন্যা সতী। পিতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেবাদিদেব মহাদেব বা শিবের গলায় মাল্যদান করে তার সঙ্গে পরিণয় অর্থাৎ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এরপর এক মহাযজ্ঞানুষ্ঠানে রাজা দক্ষ সমস্ত দেব-দেবীগনকে আমন্ত্রণ জানালেও পুত্রীসতী এবং জামাতা দেবাদিদেব মহাদেব বা শিবকে কোন সংবাদ দেননি। মাতা সতী পিতার যোগানুষ্ঠানে উপস্থিত হবার জন্য শিবের কাছে অনুমতি চাইলে শিব তাতে সম্মত হননি , কিন্তু মাতা সতী শিবকে বাধ্য করেছিলেন অনুমতি প্রদান করতে। সে বিষয়ে এখানে লিখতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই পরে অন্য কখনো মায়ের সেই কর্মকাণ্ডের কথা অবশ্যই আপনাদের কাছে উল্লেখ করবো। যাইহোক, যজ্ঞাস্থলে উপস্থিত হয়ে পিতার মুখে পতির নিন্দা শুনে মর্মাহত হয়ে দক্ষের সেই যজ্ঞাগ্নিতে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন মা সতী। আশাকরি এর পরের ঘটনা সকলেরই জানা আছে। পরজনমে হিমালয় রাজের গৃহে তার কন্যা রূপে জন্ম নেন মাতা সতী এবং মায়ের নাম হয় শৈলপুত্রী।
ঋষভ বাসনা, দ্বিভূজা ডান হাতে ত্রিশুল এবং বাম হাতে পদ্ম। সাধকের পূর্ব জন্মের সমস্ত ইচ্ছে পূরণকারিনী অনন্ত শক্তির আধার শ্রীশ্রী মা শৈলপুত্রী।
পূজার দিনক্ষণ :- ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৫ই আশ্বিন ১৪৩২ সোমবার রাত্রি ৬টা১৮ মিনিট থেকে রাত্রি ৯টা ৫৬ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করতে হবে।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং শ্রীং শৈলপুত্রৈ নমঃ ওঁ“
জপ সংখ্যা ঃ– ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা জপ অবশ্যই বাঞ্ছনীয় এবং মন্ত্র গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং শ্রীং শৈলপু্ত্রৈ নমঃ ওঁ “
কুচো গাঁদা অথবা দোপাটি ফুল দ্বারা অবশ্যই ১০৮ বার ঘটের উপর ফুলার্ঘ্য নিবেন করবেন।
ফুলার্ঘ্য নিবেদনান্তে করোজোড়ে মনে মনে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- ওঁ প্রননামি সদা শিবং শৈলপু্ত্রৈং বৃষারূঢাং।
জগতাং মাতরাং দেবীং ধর্মকামসমৃদ্ধয়ে ।।
“হে মাতে আমি নিশ্চিত আমার নিবেদিত ভোগসহ শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করে তুমি আমাকে আশীর্বাদ করেছো। মা’গো আমার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ করো, আমার পূর্ব জন্মের কোনো আশা-আকাঙ্খা আমার মনে নেই, কিন্তু এই জন্মে আমি যেন সর্বক্ষেত্রে সফল হই এবং আমার সমস্ত আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হয়।
প্রসাদ সর্বপ্রথম নিজে খাবেন এবং তারপর কোন কুমারী অর্থাৎ কোন শিশু কন্যার হাতে তুলে দেবেন এবং তার খাবার পর সম্ভব হলে তাকে প্রণাম করবেন অথবা মাতৃজ্ঞানে তার ডান হাতটি আপনার নিজের মাথায় ছুঁয়ে মনে মনে আপনার মনস্কামনা জানাবেন এবং অবশ্যই বলবেন “মাগো এই পুজায় যদি কোন রকম ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমাকে তোমার সন্তান রূপে ক্ষমা কর।”
২.ব্রহ্মচারিনী

২.ব্রহ্মচারিনী :- নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ মাতা শ্রীশ্রী ব্রহ্মচারিনী। কথিত আছে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক জন্ম জন্মান্তরের। হিমালয় রাজের কন্যা রূপে জন্ম নেবার পর মাতা সতী তার নিজের প্রতি দেবাদীদের মহাদেব বা শিবকে পুনপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে কঠিন তপস্যা করে তাঁকে স্বামী রূপে লাভ করেছিলেন।
মা দ্বিভূজা তেজঃজ্যোতিতে পূর্ণা, দন্ডায়ময়ী মাতা ব্রহ্মচারিনী। মায়ের ডান হাতে জপের মালা এবং বাম হাতে কমন্ডুল শোভিতা। নবরাত্রির দ্বিতীয় রাত্রে মাতা শ্রীশ্রী ব্রহ্মচারিনীর পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে মায়ের কৃপা লাভে সাধকের সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ হয় এবং রমনীগণ তাদের মন মতো স্বামী লাভ করে থাকে। তাই রমনীগণের জন্য মায়ের এই রূপের পূজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে একথাও সত্যি রমনীগণ যদি সম্পূর্ণ পূজা অর্থাৎ নবদুর্গার নয় রূপের পূজায় সামর্থ্য না হয়, তাহলে মাতা শ্রীশ্রী ব্রহ্মচারিনীর পূজা স্থলে উপস্থিত থেকে এই পূজায় অংশগ্রহণ করে মা’কে তুষ্ট করতে পারলে সেই রমনীরও মনস্কামনা পূর্ণ হয় অর্থাৎ মনমতো স্বামী লাভ করে থাকে।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৬ই আশ্বিন ১৪৩২ মঙ্গলবার রাত্রি ৮টা ৫৮ মিনিট থেকে রাত্রি ১১টা ৫৬ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা উচিত।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ব্রাং ব্রহ্মচরিণৈ নমঃ ওঁ “
জপ সংখ্যা ঃ– ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা জপ অবশ্যই বাঞ্ছনীয় এবং মন্ত্র গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ব্রাং ব্রহ্মচরিনৈ নমঃ ওঁ“
কুচো গাঁদা অথবা দোপাটি ফুল দ্বারা ঘটের উপর ১০৮ বার ফুলার্ঘ্য নিবেন করা বাঞ্ছনীয়।
ঘটের উপর ফুলার্ঘ্য নিবেদনান্তে করোজোরে মা’কে প্রনাম জানাবেন।
প্রণাম মন্ত্র :- ওঁ সিদ্ধিবুদ্ধিপদে দেবী ত্যাগবৈরাগ্যদায়িনী।
ব্রহ্মচারিনী মাতস্ত্বাং নমাস্যান্ত বিভূতয়ে।।
হে মাতে আমি নিশ্চিত তুমি আমার পূজা সহ প্রসাদ এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো, মাগো আমার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ করো। আশীর্বাদ কামনা, ভোগ বিতরণ ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি প্রথম রাতের মতোই হবে।
এই পূজায় মাকে তুষ্ট করতে পারলে কন্যাগণ তাদের মনোমতো প্রতি লাভ করে থাকেন এবং যে স্ত্রীর স্বামী অন্য নারীতে আসক্ত তিনি তার স্বামীকে নিজে বশেবশীভুত করবার জন্য মায়ের সামনে আকুতি জানালে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন তৃতীয় ব্যক্তি আসতে পারে না। পুরুষগণ একই ফল পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
৩.চন্দ্রঘন্টা

৩.চন্দ্রঘন্টা :- নবদুর্গার তৃতীয় রূপ মাতা শ্রীশ্রী চন্দ্রঘন্টা। মুখমণ্ডল তথা মস্তক ঘন্টার মত অর্ধচন্দ্রকার ব্যঘ্র বাহনা এবং নানা অস্ত্রে সুসজ্জিতা কাঁচা হলুদ বা পাকা স্বর্ণের ন্যায় উজ্জ্বল বর্ণনা শ্রীশ্রী মা চন্দ্রঘন্টা।
নবরাত্রিক পূজার তৃতীয় রাত্রে মায়ের এই রূপের পূজায় মাকে তুষ্ট করতে পারলে সাধকের সর্ব বাধা-বিঘ্ননাশ, শত্রুনাশ তথা সর্ব সুখ প্রাপ্তি ঘটে থাকে এবং আসন্ন বিপদের পূর্বে, নিস্তার লাভার্থে সাধক-সাধিকার কানে ঘন্টার ধ্বনি শ্রবণিত হতে থাকে।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৭ই আশ্বিন বুধবার রাত্রি ৬টা ২৮ মিনিট থেকে রাত্রি ১০টা ৫৬ মিনিটের মধ্যে।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং চং চন্দ্রঘন্টায়ৈ নমঃ ওঁ “
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা জপ করতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং চং চন্দ্রঘন্টায়ৈ নমঃ ওঁ “
প্রতিষ্ঠিত ঘাটের উপর কুচো গাঁদা অথবা দোপাটি ফুল দ্বারা ১০৮ বার ফুলার্ঘ্য নিবেন করতে ভুলবেন না। ফুলার্ঘ্য নিবেদনান্তে মনে মনে মা’কে প্রনাম জানাবেন।
প্রণাম মন্ত্র :- ওঁ মহাভীম মৃগারূঢ়াং চন্দ্রকোলস্ত্রকৈর্য্যতাম।
চন্দ্রঘন্টেতি বিশ্রুতাং প্রণনামি সদাশিবাং।।
হে মাতে আমি নিশ্চিত তুমি আমার পূজা সহ প্রসাদ এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো। মাগো আমার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ করো। আশীর্বাদ কামনা, ভোগ বিতরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি প্রথম রাতের মতোই হবে।
মায়ের এই রূপের পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে যেকোনো বিপদের পূর্বে সাধক-সাধিকার কানে ঘন্টার ধ্বনি শ্রবণিত হয়ে থাকে।
৪.কুষ্মান্ডা

৪.কুষ্মান্ডা :- নবদুর্গার চতুর্থ রূপ মাতা শ্রীশ্রী কুষ্মাণ্ডা। সৃষ্টির পূর্বে পৃথিবী যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল তখন ঈষদ হাস্য দ্বারা জগত সংসারের সৃষ্টি তথা আলো জ্বালিয়েছিলেন মাতা শ্রীশ্রী কুষ্মাণ্ডা। মায়ের দেহ কান্তি সূর্যের ন্যায় দীপ্তিময়ী এবং তারই দেহের থেকে নির্গত তেজঃশক্তি সঞ্চারিত হয়ে চলেছে জগত সংসারের প্রতিটি প্রাণীর দেহে। দেবী অষ্টভুজা যথাক্রমে গদা, চক্র, পদ্ম, কমন্ডুল, তীর, ধনুক, অমৃত পূর্ণ কলস এবং সিদ্ধি প্রদানকারী জপমাল্য হাতে ব্যাঘ্রবাহনা। মায়ের এই রূপের পূজাকালে, মায়ের ভোগে পাকা কুমড়ো ভাজা বা তরকারি প্রদান অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। কারণ মায়ের প্রিয় খাদ্য কুমড়ো এতে মা অত্যন্ত খুশি হন। নবরাত্রিক পূজার চতুর্থ রাত্রে মাতা শ্রীশ্রী কুষ্মান্ডার পূজাকালে সাধ্যমত ফুল, দুর্বা, চন্দন, অন্নভোগ নিবেদনে মা অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে থাকেন এবং সাধক-সাধিকার রোগ-শোক নাশসহ যশ-খ্যাতি তথা আয় বৃদ্ধির আশীর্বাদ করে থাকেন।
পূজার দিনক্ষণ :- ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৭ই আশ্বিন ১৪৩২ বুধবার রাত্রি ৬টা ২৮ মিনিট থেকে রাত্রি ১০টা ৫৬ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করতে ভুলবেন না।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্রীং কুষ্মান্ডায়ৈ নমঃ ওঁ“
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। জপ গচ্ছিত রাখতে বা সমর্পন করতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্রীং কুষ্মান্ডায়ৈ নমঃ ওঁ “
এই মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে কুচো গাঁদা বা দোপাটি ফুল মায়ের ঘটের উপর ফুলার্ঘ্য নিবেন করবেন। এরপর করেজোর মনে মনে মা’কে প্রনাম জানাবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- “ওঁ আধিব্যাধি বিনাশিনী কুষ্মান্ডা রূপধারিনী।
সহস্রাস্ হিতে দেবী তষ্মৈ নিত্যং নমো নমঃ ওঁ “
এরপর প্রথম রাত্রের মতোই মায়ের কাছে প্রার্থনা করবেন। হে মাতে আমি নিশ্চিত তুমি আমার পূজা সহ প্রসাদ এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো মাগো আমার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ করো। আশীর্বাদ কামনা, ভোগ বিতরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি প্রথম রাতের মতোই হবে।
মায়ের এই রূপের পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে সাধক-সাধিকার সমস্ত রোগ-ব্যাধির থেকে মুক্তি পায় সেই সঙ্গে সুখ-শান্তি, যশ-খ্যাতি বৃদ্ধিসহ আয়ূ বৃদ্ধি ঘটে থাকে এতে কোন হন্দেহ নেই।
৫,ষ্কন্দমাতা

৫,ষ্কন্দমাতা :- নবরাত্রিক পূজার পঞ্চম রাত্রে মাতা শ্রীশ্রী ষ্কন্দমাতার পূজা হয়ে থাকে। এটি নবদুর্গার পঞ্চম রূপ। এই পূজার পূর্বে শ্রীশ্রী মা দুর্গাপুত্র কার্তিকের পূজা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। এই পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে পুত্রহীনা বা অপুত্রের পুত্র লাভ হয়। পুত্রবতীর পুত্র সৌম্যকান্তি যুক্ত এবং আজ্ঞাকারী হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে সাধক-সাধিকার দেহেও এক অলৌকিক প্রাণশক্তির দিব্যজ্যোতি এবং সৌম্যকান্তির প্রকাশ দৃষ্ট হয়।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৬শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ৯ই আশ্বিন ১৪৩২ শুক্রবার রাত্রি ৬টা ৮ মিনিট থেকে রাত্রি ৮টা ৪৬ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং কাং ষ্কন্দমাতায়ৈ নমঃ ওঁ “
জপ সংখ্যা ঃ– ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। জপ মন্ত্র গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং কাং ষ্কন্দমাতায়ৈ নমঃ ওঁ“
কুচো গাঁদা বা দোপাটি ফুল দ্বারা মায়ের ঘটের উপর ১০৮ বার ফুলার্ঘ্য নিবেন করবেন এবং ফুলার্ঘ্য নিবেদনান্তে করোজোড়ে মনে মনে মায়ের কাছে প্রার্থনা জানাবেন।
প্রণাম মন্ত্র :- “ওঁ সিংহাসনগতে দেবী অক্ষান্তোজ করায়ূজে।
ষ্কন্দমাতায়ৈ শুভদে মে পরশেমি নমহস্তেতে।।“
এরপর আরও একবার প্রার্থনা জানিয়ে বলবেন, হে মাতে আমি নিশ্চিত যে তুমি আমার পূজা সহ প্রসাদ এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো। মা’গো আমার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ করো। আশীর্বাদ কামনা, ভোগ বিতরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি প্রথম রাতের মতোই হবে।
এই পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে সাধক-সাধিকার সন্তান-সন্ততি লাভসহ নিজের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে থাকে। প্রাসাদ বিতরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা প্রথম রাতের মতোই হবে।
৬.কাত্যায়নী

৬.কাত্যায়নী :- মহর্ষি কাতের পুত্র ঋষি কাত্যায়ন বহু তপস্যায় শ্রীশ্রী মা ভগবতীকে তুষ্ট করে নিজের কন্যা রূপে লাভ করে ছিলেন। তাই মায়ের এই রূপের নাম কাত্যায়নী। নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ। স্বর্গ রাজ্য পুনরুদ্ধার সহ মহিষাসুর বা ঘোরাসুর নিধানের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু মহেশ্বর এর স্ব স্ব তেজ প্রদানে তেজস্বী হয়ে ওঠেন দেবী কাত্যায়নী। কাঁচা হলুদ বা পাকা স্বর্ণের ন্যায় দীপ্তিময়ী সিংহ বাহনা চতুর্ভূজা দেবী কাত্যায়নীর ডান হস্তদ্বয়ে অভয় ও বরমুদ্রা প্রদানতা এবং বাম হস্তদ্বয়ে যথাক্রমে অসি এবং কমল বা পদ্ম শোভিতা। নবরাত্রিক পূজার ষষ্ঠ রাত্রে শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস, নিষ্ঠা, পবিত্রতা এবং একাগ্রতাসহ মাতা শ্রীশ্রী কাত্যায়নির পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে সাধক-সাধিকার রোগ, শোক, বাধা-বিঘ্ন, ভয় ইত্যাদি দূরসহ অলৌকিক শক্তির অধিকারী হতে পারেন সাধক-সাধিকা। এই কারণেই শারদীয়া দূর্গা উৎসবের তিথির ষষ্ঠী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিটি দুর্গাপূজা মন্ডপে সাড়ম্বরে মায়ের পূজা হয়ে থাকে এবং দশমীতে সিঁদুর দানান্তে স্বপরিবারে মায়ের মুর্তি বিসর্জন করা হয়।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১০ই আশ্বিন ১৪৩১ শনিবার রাত্রি ৭টা ২৮ মিনিট থেকে রাত্রি ১১টা ৪৮ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্রীং কত্যায়নৈ নমঃ ওঁ “
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। মন্ত্র গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্রীং কত্যায়নৈ নমঃ ওঁ“
কুচো গাঁদা ফুল বা দোপাটি ফুল দ্বারা মায়ের ঘটের উপর ফুলার্ঘ্য নিবেদনান্তে করোজোড়ে মনে মনে মা’কে প্রনাম জানাবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- ওঁ সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তি সমান্ধিতে।
পাতুনঃ সর্বভূতেভ্যঃ কত্যায়নৈ নমহস্তেতে।।
এরপর আরও একবার প্রার্থনা জানিয়ে মনে মনে বলবেন, হে মাতে আমি নিশ্চিত যে তুমি আমার পূজা এবং প্রাসাদ গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো।
এই পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে মায়ের কৃপায় সাধক-সাধিকার সমস্ত রোগ-শোক, বাধা-বিঘ্নসহ মনের মধ্যের লুকাইত ভয় দূর হয় এবং অলৌকিক তেজঃশক্তির অধিকারী হয়ে থাকে সাধক-সাধিকা। আশীর্বাদ কামনা, ভোগ বিতরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা প্রথম রাতের মতোই হবে।
৭.কালরাত্রি

৭.কালরাত্রি :- নবদুর্গার সপ্তম রূপ কালরাত্রি। এখানে মা, পূর্ণ কৃষ্ণবর্ণা, ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা, ভয়ঙ্কর রূপিনী, রুক্ষকেশী, কন্ঠে বিদ্যুৎ রশ্মির ন্যায় উজ্জ্বল মাল্য, শ্বাস-প্রশ্বাসে ভয়ঙ্কর অগ্নি নির্গতা।গর্ধোবাহনা, চতুর্ভূজা, মায়ের ডান হস্তদ্বয়ে অভয় ও বরমুদ্রা প্রদানতা এবং বাম হস্তদ্বয়ে খড়্গ ও লৌহকন্টক ধারিনী, ভয়ঙ্কর রূপিনী মাতা শ্রীশ্রী কালরাত্রি। নবরাত্রিক পূজার সপ্তম রাত্রে শ্রদ্ধা, ভক্তি, বিশ্বাস, নিষ্ঠা, পবিত্রতা এবং একাগ্রতাসহ মায়ের এই রূপের পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে ভক্তের গ্রহবিঘ্নসহ সর্ব শত্রু নাশ হয়ে থাকে এবং বিপদকালে বা শত্রুর সম্মুখে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাস নিয়ে মা’কে স্মরণ করা মাত্রই শত্রু যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন তৎক্ষণাৎ সেখানে থেকে পলায়ন করতে বাধ্য হয়।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৮শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১১ই আশ্বিন রাবিবার ১৪৩২ রাত্রি ৬টা ৫৮ মিনিট থেকে রাত্রি ১০টা ২৭ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্লীং কালরাত্রৈ নমঃ ওঁ“
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। জপ গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং ক্লীং কালরাত্রৈ নমঃ ওঁ”
কুচো গাঁদা বা দোপাটি ফুল দিয়ে মায়ের ঘটের উপর ১০৮ বার ফুলার্ঘ্য নিবেদানান্তে মনে মনে মা’কে প্রনাম করবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- ওঁ একবেণীধরাং নগ্নাং দেবীং কন্টকভূষণাম।
সর্ব অশুভ শক্তি বিনাশার্থাং কালরাত্রৈং নমাস্যহম।।
এরপর করোজোড়ে মনে মনে মনস্কামনা জানাবেন, হে মাতে আমি নিশ্চিত তুমি আমার পূজা এবং প্রসাদ গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো।
এই পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে মাতা শ্রীশ্রী কালরাত্রি তার ভক্তের সর্ব গ্রহবিঘ্ন দূর করে তাকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছতে সাহায্য করেন এবং বিপদকালে মা’কে স্মরণ করা মাত্রই মা তার ভক্তকে রক্ষা করে থাকেন। ভোগ বিতরণ,আশীর্বাদ কামনা এবং ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি প্রথম রাতের মতোই হবে।
৮.মহাগৌরী

৮.মহাগৌরী :- নবদুর্গার অষ্টম রূপ মাতা শ্রীশ্রী মহাগৌরী। দেবাদিদেব মহাদেব বা শিবকে পুনরায় পতিরূপে পাবার উদ্দেশ্যে কঠোর তপস্য্যায় ভোর কৃষ্ণ বর্ণ হয়ে পড়েন দেবী মহাগৌরী। কিন্তু মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাকে পতিরূপে গ্রহণ করবার পর শ্রীশ্রী মা গঙ্গার পবিত্র জলে স্নানের সাথে সাথেই শঙ্খ বা চন্দ্রের নেয় উজ্জ্বল শুভ্র বর্ণনা হয়ে ওঠেন মাতা শ্রীশ্রী মহাগৌরী। বৃষভবাহনা, শুভ্রবর্ণা,শ্বেতবস্ত্র পরিহিতা, নানা অলংকারে সুসজ্জিতা মাতা শ্রীশ্রী মহাগৌরী। এখানে মা চতুর্ভূজা ডান হস্তদ্বয়ে যথাক্রমে আশীর্বাদরতা ও জপমাল্য ধারিনী এবং বাম হস্তদ্বয়ে যথাক্রমে কমন্ডুল ও ত্রিশুল ধারিনী। নবরাত্রিক পূজার অষ্টম রাত্রে মাতা শ্রীশ্রী মহাগৌরীর পূজায় মা’কে তুষ্ট করতে পারলে, সাধক-সাধিকা অনায়াসে যেকোনো ব্যক্তিকে নিজের বশে বশীভূত করবার অসীম ক্ষমতা অর্জন করে থাকে, বধুগন তার নিজের স্বামীকে।
পূজার দিনক্ষণ :- ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন ১৪৩২ বৃহস্পতিবার রাত্রি ৬টা ১৮ মিনিট থেকে রাত্রি ৯টা ৫০ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং শ্রীং মহাগৌরীয়ৈ নমঃ ওঁ“
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। জপ গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং শ্রীং মহাগৌরীয়ৈ নমঃ ওঁ “
কুচো গাঁদা বা দোপাটি ফুল ১০৮ বার মায়ের ঘটের উপর ফুলার্ঘ্য নিবেদানান্তে মনে মনে মা’কে প্রনাম করবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- “ওঁ শ্বেতবৃষারূঢ়ে মাতঃ সর্ব সৌভাগ্যদায়িণী।
সর্ব দঃখহরে দেবী শ্রীশ্রী মহাগৌরীয়ৈ নমহস্তেতে।।
এরপর আরো একবার মনে মনে প্রার্থনা জানিয়ে বলবেন, হে মাতে আমি নিশ্চিত তুমি আমার পূজা এবং প্রসাদ গ্রহণ করে আমাকে আশীর্বাদ করছো। মা’গো আমার কথায় মিষ্টতা আনো, কেউ যেন আমার কথায় আঘাত না পায়। আমি যেন সর্বক্ষণ সকলের প্রিয় হয়ে থাকতে পারি এবং পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী যেন আমার বশে বশীভূত হতে বাধ্য হয়।
প্রসাদ বিতরণ, আশীর্বাদ কামনা এবং ক্ষমা প্রার্থনা প্রথম রাতের মতোই হবে।
৯.সিদ্ধিদাত্রী

৯.সিদ্ধিদাত্রী :- নবদুর্গার নবম এবং শেষ রূপ মাতা শ্রীশ্রী সিদ্ধিদাত্রী। পুরাণের মতে দেবাদিদেব মহাদেব বা শিব স্বয়ং দেবীর কৃপা সিদ্ধিলাভ করে তার অনুগ্রহেই অর্ধনারীশ্বর হয়েছিলেন। এখানে দেবী ব্যাঘ্রবাহনা অষ্টভূজা, যথাক্রমে শঙ্খ,পদ্ম,গদা, চক্র,অসি, ত্রিশুল ও তীর-ধনুকে সুসজ্জিতা কিন্তু আশীর্বাদরতা। মতান্তরে পদ্মাসনা চতুর্ভুজা। নবরাত্রিক পূজার নবম বা শেষরাত্রে মাতা শ্রীশ্রী সিদ্ধিদাত্রীর পূজায় মা’কে তুষ্ট করবার পর সাধক-সাধিকার ইহলোক এবং পরলোকের কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকে না। মায়ের সান্নিধ্যে তার সর্ব মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে থাকে।
পূজার দিনক্ষণ :- ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১৩ই আশ্বিন ১৪৩২ মঙ্গলবার রাত্রি ৮টা ৫০ মিনিট থেকে রাত্রি ১১টা ৫৬ মিনিটের মধ্যেই পূজা সম্পন্ন করা বাঞ্ছনীয়।
মন্ত্র :- “ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং দুং দর্গায়ৈ সিদ্ধিদাত্রীয়ৈ নমো নমঃ ওঁ“
জপ সংখ্যা :- ১০০৮ কমপক্ষে ১০৮ সংখ্যা। মন্ত্র গচ্ছিত রাখতে ভুলবেন না।
ফুলার্ঘ্য :- “এতে গন্ধ পুষ্পে ওঁ হ্রীং হ্রীং হ্রীং দুং দর্গায়ৈ সিদ্ধিদাত্রীয়ৈ নমো নমঃ ওঁ“
কুচো গাঁদা বা দোপাটি ফুল দ্বারা মায়ের ঘটের উপর ১০৮ বার ফুলার্ঘ্য নিবেদানান্তে মনে মনে মা’কে প্রনাম জানাবেন।
প্রনাম মন্ত্র :- “ওঁ সব্যমানাং সরাসুরৈঃ সদাসিদ্ধি প্রদায়িনীম্।
প্রণনামি সদ্যভক্ত্যা সিদ্ধিদাত্রীং সুখান্তয়ৈ।।
প্রার্থনা :- হে মাতে আমি নিশ্চিত গত নয় রাত্রি যাবত আমি যে তোমার পুজো করেছি, তাতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে আশীর্বাদ করছো, আমার নিবেদিত ভোগ এবং শ্রদ্ধার্ঘ্য গ্রহণ করেছো।
হে মতে আমি অজ্ঞ কিন্তু পবিত্র দেহ, মন ও বস্ত্রে আমার শ্রদ্ধা, ভক্তি, নিষ্ঠা, পবিত্রতা, বিশ্বাস এবং একাগ্রতায় তোমার পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি। তবুও যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো। হে মাতে আমাকে সর্বসিদ্ধ প্রদান কর।
প্রসাদ বা ভোগ বিতরণ প্রথম রাত্রের মতোই হবে। তবে নবম বা শেষরাত্রে পূজার পর নয়টি শিশু কন্যাকে (বয়স ১১ বছরের মধ্যেই) মায়ের প্রসাদ বা ভোগ নিবেদনসহ সাধ্যমত উপহার সামগ্রী তাদের হাতে তুলে দেবার পর সম্ভব হলে মাতৃজ্ঞনে তাদের চরণ স্পর্শ করে প্রনাম করবেন অথবা মনে মনে প্রনাম করবেন। সেই রাত্রে নয়টি শিশু কন্যাকে না পাওয়া গেলে একটি কুমারী কন্যাকেও পূজার্চনা করতে পারেন। তবে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি এবং বিশ্বাস থাকলে নয়টি শিশুকন্যা যথা সময়ে আপনার কাছে চলে আসবে।
মনে রাখবেন আপনার আহারে যেমন অন্যের ক্ষুধা নির্ধারণ হয় না ঠিক তেমনি অন্যের দ্বারা পূজা করালে আপনার কোন কর্মেই লাগবে না। প্রয়োজনে প্রথম এবং শেষ দিন কোন সৎ এবং সঠিক বিপ্র বা ব্রাহ্মণ অথবা ব্রাহ্মণ পত্নীর সাহায্য নিতে পারেন।
পরের দিন অর্থাৎ ১লা অক্টোবর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১৪ই আশ্বিন ১৪৩২ বুধবার বিকেল ২টো ৩৬ মিনিটে তিথি দশমী স্পর্শ করবে। তারপর এ য়ো মিলে সিঁদুর দানান্তে অর্থাৎ মাতৃ জ্ঞনে ঘটে সিঁদুর দানান্তে নিজেদের মধ্যে অর্থাৎ সিঁথিতে সিঁদুর দানান্তে ১লা অক্টোবর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১৪ই আশ্বিন ১৪৩২ বুধবার বিকেল ৪টের পর পুনরায় সিঁদুর দানান্তে ঘটসহ ফুল ইত্যাদি পবিত্র জলাশয় বা গঙ্গায় বিসর্জন করে আগামী বছরের জন্য মা’কে আহ্বান জানিয়ে বাড়িতে ফিরে আসবেন। পরবর্তী ক্রিয়াগুলি অন্যান্য পূজার নেয় হবে।
যারা দুর্গাপুজোর পরে কোজাগরি লক্ষী পূজা করে থাকেন তারা আগামী ৬ই অক্টোবর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ১৯শে আশ্বিন ১৪৩২ সোমবার বেলা ১১টা ২৪ মিনিট থেকে পরের দিন অর্থাৎ ৭ই অক্টোবর ২০২৫ বঙ্গাব্দের ২০শে আশ্বিন ১৪৩২ মঙ্গলবার বেলা ৯টা ৩২ মিনিটের মধ্যেই কোজাগরি লক্ষী পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ভুলবেন না।
মায়ের কাছে প্রার্থনা করছি সুখ-সাচ্ছন্দে ভরে উঠুক সমগ্র বিশ্ববাসী।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকার উদ্দেশ্যে রইল শুভ শারদীয়ার অগ্রিম প্রীতি ও শুভেচ্ছাসহ একবুক ভালোবাসা।